"ওঁ নমঃ পার্বতী পতয়ে হর হর মহাদেব"
THE ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশন এর তরফ থেকে আমরা চার জন আমি , সায়ান্তনীদি , দীপিকাদি , অভিজিৎবাবু , কেশবদা আর আমাদের গাইড ভুপেশ মিলে আমরা আমাদের কৈলাশ যাত্রা প্ল্যান করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগেই, ২০২৫ সালে। প্রথমে একটা হোয়াটস্যাপ গ্রুপ তৈরী করে আমরা ইসিনস্টিটুটে এর তালিম মত্ত হাই অল্টিটুডে প্রাকটিস শুরু করে দিয়েছিলাম মাস খানেক আগেই। প্র্যাক্টিসে মানে নিঃস্বাস প্রস্বাস ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু উপায় , দৌড় আর সিঁড়িভাঙ্গা কারণ শ্রীখণ্ড মহাদেব এর এই অতি উচ্চতায় যাতে আমরা পরাস্ত না হই। ট্রেন এর টিকিট কাটা হয়ে গেলো। ব্যাগ গুছিয়ে আমি তৈরী নির্দিষ্ট দিনে যাত্রা করার উদ্দেশে।
প্রথম দিন - প্রথম দিন আমি হাওড়া পৌছালাম এবং টীম এর সাথে মিট করলাম স্টেশন এ । রাতের ট্রেন ধরে চললাম চন্ডিগড় এর পথে।
দ্বিতীয় দিন - সারাদিন আজ ট্রেনই কাটলো সবার সাথে গল্প আড্ডা ফুর্তি আর খাওয়াদায়া করে। আজকেই মধ্যরাতে আমরা নামবো চন্ডিগড় স্টেশনে। ভোররাতে আমরা সবাই নামলাম চন্ডিগড়। অভিজিৎ-বাবু আগে থেকে গাড়ি বলে রেখেছিলেন কিন্তু পৌঁছে দেখলাম সেই ড্রাইভার তো বেসামাল অবস্থায়। মানে খেয়েদেয়ে একদম শারীরিক ভারসাম্যহীন অবস্থা। অন্যথায় অন্য গাড়ি বন্দোবস্ত করতে হলো। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য চন্ডিগড় থেকে সিমলা হয়ে একদম বেস ভিলেজে মানে যাওঁ গ্রাম।
তৃতীয় দিন - (১৮ই জুলাই ২০২৪)- আমরা গতকালই রামপুর হয়ে যাওঁ গ্রামে পৌঁছেছিল সন্ধ্যা নাগাদ। যাওঁ গ্রাম থেকে ট্রেক করে আমাদের সিংহাড বেস পৌঁছাতে সময় লেগেছিলো প্রায় দেড় ঘন্টা মতো। সারাদিনের ক্লান্তি থাকলেও মনে উদ্দীপনা ছিল অনন্ত আর ছিল মহাদেবের বাড়ী পৌঁছানোর এক অদম্য ইচ্ছে। আজ আমাদের তৃতীয় দিন সারারাত ছিলাম এক ল্যাঙ্গার খানায় কোনোরকমে। বিছানা বলতে আমাদের স্লিপিং ব্যাগ আর রাতে ওই ল্যাঙ্গার এর ফ্রি খানাপিনা। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো পূর্ণাথী দেড় কোলাহলে। রাতের হাড়কাঁপানো ঠান্ডা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম শুধুমাত্র স্লিপিং ব্যাগ এর জন্য। কঘুম থেকে উঠে দেখি আকাশ পরিষ্কার তার মানে যাত্রা স্বম্বভ। তাই আর দেরি না করে ঝটপট রেডি হয়ে গেলাম। আমাদের গাইড ভুপেশ নির্ধেশ করলো কিছু মাল এই বেস ক্যাম্পএ ছেড়ে যেতে ফেরার সময় নিয়ে নেওয়া যাবেক্ষন কেননা আজকের রাস্তা বড়োই কঠিন ও দুর্গম। আমরা বেরিয়ে পড়লাম আজকের গন্তব্যের উদেশ্যে। মেডিক্যাল চেকাপ , ডকুমেন্টস চেক করিয়ে আমরা পেলাম যাত্রা পাস্। যেহেতু আমরা হিমাচল এর সরকারি শ্রীখণ্ড কৈলাশ যাত্রা পাস্ অনলাইনে করিয়ে রেখেছিলাম ভাগ্যক্রমে তাই বিশেষ বেগ পেতে হলো না আমাদের। আমাদের টীম এর লিডার ছিলেন অভিজিৎবাবু আর ওনার কথাই শেষ কথা। অভিজিৎ বাবুকে অনেক পাহাড়ি অভিজ্ঞতার ভান্ডার বললেও কম বলা হবে।
আজ আমাদের গন্তব্য থাচরু। যাওঁ থেকে প্রায় ৭ কিমি চড়াই পথ যা পুরো খাড়া। থাচরু এর উচ্চতা প্রায় ৩০০০ মিটার, মানে প্রায় ৯৮৪২ ফুট। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কোনোরকমে টেনেহিঁচড়ে আমরা সন্ধ্যা নাগাদ থাচরু ক্যাম্প পৌছালাম। এই ৭ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ অতিক্রম করতে আমাদের সময় লেগেছিলো প্রায় ১০ ঘন্টা। ক্যাম্পে পৌঁছে আমরা একটা টেন্ট পেলাম এবং একটা লঙ্গরখানা পেলাম। যেহেতু ইটা একমাত্র সরকারি যাত্রা সময় তাই এইসময়ে এই থাকা খাওয়ার সুবিধা গুলো মোটামুটি পাওয়া যায়। অন্যসময় অবৈধ ভাবে এলে নিজেকেই পোর্টার আর গাইড এর সাথে খাবার-দাবার সরঞ্জাম নিয়ে আস্তে হয়।
এখানে বলে রাখা ভালো যে এই শ্রীখণ্ড মহাদেব যাত্রা বছরে মাত্র একবার ই হয় জুলাই মাসে সবদিক খেয়াল রেখে সরকার যাত্রার সময় নির্বাচন করে মাত্র দিন পনেরো সময়। মানে যে যেখানেই থাকুক মানে সারা পৃথিবীর যেকোনো ভক্ত চাইলে এই সময়ে একমাত্র শ্রীখণ্ড মহাদেবের বাড়ি যেতে পারেন তবে অনলাইন বুকিং এর মাধ্যমে প্রতিদিন মাত্র ৪০০ জন করে মানে ১৫X ৪০০= ৬০০০ জন ভক্ত মোটামুটি যাওয়ার সুযোগ পাই। কিন্তু দুর্গম পথ অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছেতে পারেন শুধু কিছু ভক্তই। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উচ্চতায় দম ছেড়ে ফিরে আসে। মোটামুটি ৩০% ভক্ত মহাদেবের কাছে যেতে পারেন। আসলে একটা কথা আছে যে মহাদেব না ডাকলে উনার মন্দিরে তো যাওয়া যাই ঠিকই কিন্তু বিনা আমন্ত্রণে ওনার বাড়ি পৌঁছানো মুশকিল। এছাড়াও অক্টোবর মাস পর্যন্ত অবৈধ ভাবে লুকিয়ে কেউ কেউ যাওয়ার চেষ্টা করেন, আবার সফল ও হন কিন্তু ইটা করা একদমই অনুচিত কারণ প্রতি পদে থাকে মৃত্যুভয় এবং কোনো ফিরে আসার সুযোগ থাকেনা।
চতুর্থ দিন ( ১৯-জুলাই ২০২৪)-
Write a comments